কুকুররা কেমন করে চিকিৎসা ভিক্ষা করে

Authored by Prasenjit Dutta, From his own experience
-অবসরপ্রাপ্ত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার
-প্রাক্তন সেক্রেটারি এবং প্রতিষ্ঠাতা, Pashupati Animal Welfare Society-PAWS, বারাসাত
-অধুনা, সারাদেশে পোষা প্রাণীর জন্য প্রোডাক্ট সরবরাহকারী RKD Pet Shop-এর মালিক

নিচের ভিডিওটি শুধু Scabies বা Sarcoptic Mange নামক ত্বকের রোগের মাইট-জনিত সংক্রমণে আক্রান্ত রাস্তার কুকুরদের সহজ এবং সফল চিকিৎসা নিয়ে নয়, বরং এই গল্পটি বলার জন্য যে কুকুররা কীভাবে তাদের অসুখের দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং পরিচিত গন্ধে চিনে নেয় স্থানীয় পরিচর্যাকারীকে–কিভাবে তার কাছে চিকিৎসার জন্য আর্জি জানায়।

গত ১৪ বছর ধরে আমি যে এলাকায় থাকছি (ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে), সেখানে স্থানীয় কুকুররা আমার কাছ থেকে সরাসরি চিকিৎসা পেয়েছে বা আমার সাথে যুক্ত NGO Pashupati Animal Welfare Society-PAWS (www.pawsrescue.in) এ ভর্তি হয়েছে অনেকবার। এমনও হয়েছে যে সম্পূর্ণ অচেনা অসুস্থ বা আহত কুকুর আমার হাউজিং কমপ্লেক্সের গেটের বাইরে বসে থেকেছে—আমি ঢোকা বা বেরোনোর সময় দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। মনে হয় যেন এক ধরনের টেলিপ্যাথিক সংযোগ রয়েছে- কুকুররা একে অপরকে যেভাবে জানায় কোথায় গেলে চিকিৎসা পাওয়া যাবে। আমার কাছে এটি স্পষ্ট, কারণ ওইসব মুহূর্তে, আমার হাউজিং-এর আবাসিক কুকুররা ওদের তাড়িয়ে দেয়নি, বরং অসুস্থ কুকুরটির পাশে শান্তভাবে বসেছিল যেন আমাকে ইঙ্গিত করতে। কুকুরদের এই ভরসা কেবল তাদেরই প্রতি জন্মে যায়, যাদের উপরে তারা নিখাদ বিশ্বাস রাখে।

এখন ভিডিওতে প্রদর্শিত Scabies আক্রান্ত কুকুরটির ঘটনায় আসতে গেলে, একটু পেছনের গল্প বলা দরকার। কালো রঙের পুরুষ কুকুর Keltu এবং তার এই মৌসুমের সঙ্গিনী Khuki আমার একটি dog feeding গ্রুপের ৮টি কুকুরের দলে ছিল, যাদের অবস্থান এখান থেকে প্রায় ৫০ মিটার দূরে। Keltu ছিল নবাগত, আর প্রথম দিন থেকেই সে আমার গায়ে গা ঘেঁষে থাকত, যেন হাতের ছোঁয়া ভিক্ষা করছে। আমি গালে হাত রাখতেই সে হঠাৎ শরীর চুলকাতে আর কামড়াতে শুরু করে। আধো অন্ধকারে আমি দেখতে পেলাম সে শুধু হাড়-জিরজির নয়, তার পুরো পিঠটাই রক্তাক্ত ঘা-এ ভর্তি। বুঝলাম, তাকে তার মূল খাবারের জায়গা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং বহু সপ্তাহ ধরে সে না খেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি স্থির করলাম তাকে সুস্থ করে তুলব। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে ৩ সপ্তাহ ধরে ডবল ডোজে ডগ ফুড খাওয়ানোর পর সে বেশ মাংসল আর শক্তপোক্ত হয়ে উঠেছে।

চিকিৎসার ক্ষেত্রে, দ্বিতীয় দিনই আমি তাকে এক ডোজ Ivermectin injection দিয়েছিলাম। কিন্তু এরপর দ্বিতীয় ডোজ দিতে পারিনি ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত। কারণ, সে Khuki-কে সঙ্গিনী হিসেবে বেছে নেয় আর বাকিদের সঙ্গে লড়াইয়ে আহত হয়ে যায়। এরপর দু’জনেই গায়েব, পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে বলে। পরে কাকতালীয়ভাবে প্রায় ৫০ মিটার দূরে একটি মোটর গ্যারেজে ওদের খুঁজে পাই, যেখানে তারা ভবিষ্যতের বাচ্চাদের জন্য জায়গা ঠিক করেছে। আমি Khuki-কে স্টেরিলাইজ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তাকে ধরা যায়নি—মানুষ কাছে গেলেই পালিয়ে যায়।

তার দ্বিতীয় চিকিৎসা-ভিক্ষা ইঙ্গিত আসে ২ দিন আগে, যখন সে খাবার খেতে অস্বীকার করে আর আমার পায়ের সঙ্গে ঘষা খেয়ে জোরে কাঁদতে থাকে, মাঝে মাঝে শরীর কামড়ানো-চুলকানো চলতেই থাকে। তার সংকেত ছিল: “এখনই চিকিৎসা করো, খাবার পরে খাব।” তাই গতকাল তাকে আবার এক ডোজ দিলাম। ৩ সপ্তাহ আগে প্রথম ইনজেকশনের সময় সে একটু বাধা দিয়েছিল, কিন্তু এবার দাঁড়িয়ে রইল একেবারে স্থির, যেন একটা গাড়ি কার ওয়াশে দাঁড়িয়ে আছে। এখন সে জেনে গেছে যে এই ইনজেকশনই আগের ভয়াবহ অবস্থা থেকে আরোগ্য এনেছিল। আর দেখুন ভিডিওতে ওই injection দেওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরের অবস্থা—একবারও চুলকায়নি, খাবারও তাড়াতাড়ি শেষ করেছে। ত্বকও আগের থেকে অনেক ভালো, সুস্থ হয়ে ওঠা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

আশা করি অনেক পশুপ্রেমী এই অভিজ্ঞতা পড়ে বহু কুকুরকে mange থেকে আরোগ্যদান করতে পারবেন। এই ধরনের কুকুরকে চিকিৎসা করা খুব জরুরি, কারণ রোগগ্রস্ত চেহারা নিয়ে তারা কোথাও বসতে পর্যন্ত পারে না, খাবার পাওয়া তো দূরের কথা। যেসব কুকুরকে ছোঁয়া যায় না, তাদের ক্ষেত্রে সমাধান হলো Ivermectin 10 mg Tablets নির্ধারিত মাত্রায় খাওয়ানো, যদিও মুখে খাওয়ানো ওষুধে প্রভাব আসতে অনেক দেরি হয়।

About Scabies:

কুকুরের Scabies বা sarcoptic mange, যা Sarcoptes Scabiei নামক মাইট দ্বারা হয়–এটি অত্যন্ত সংক্রামক চর্মরোগ। এই মাইট ত্বকের ভেতরে ঢুকে প্রচণ্ড চুলকানি সৃষ্টি করে ও ত্বকের ক্ষতি করে। এটি কুকুর থেকে কুকুরে সরাসরি সংস্পর্শে ছড়ায়, কখনো কখনো দূষিত বিছানা বা জিনিসপত্র থেকেও ছড়াতে পারে। লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে লোম ঝরে যাওয়া, ত্বক এ শক্ত খোসা সৃষ্টি করে, সেগুলো ফেটে লাল ও কাঁচা ঘা তৈরি হওয়া, এবং প্রচণ্ড চুলকানি—বিশেষত কান, কনুই ও পেটের অংশে।

চিকিৎসা হওয়া উচিত ভেট ডাক্তারদের নির্দেশনামতো। তবে সাধারণ নিয়ম হলো Ivermectin 10 mg/ml potency injection সাবকিউটেনিয়াসভাবে প্রয়োগ করা, যার মাত্রা হবে শরীরের ওজন প্রতি কেজিতে 0.4 ml, প্রতি আট দিনের ব্যবধানে, ন্যূনতম 4 থেকে 6 সপ্তাহ পর্যন্ত। যদি মেডিকেটেড শ্যাম্পু দিয়ে স্নান করানোর মতো সহায়ক চিকিৎসা সম্ভব না হয়, তবে এই ইনজেকশনই প্রধান ভরসা।